ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞের সর্বোচ্চ শাস্তি চাইলেন অ্যাটর্নি জেনারেল

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক :  জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ইতিহাসের যে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে তার সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

 

আজ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে সূচনা বক্তব্যে এ আবেদন জানান তিনি।

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা আসাদুজ্জান বলেন, ‘আমাদের সামনে যে ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে জুলাই বিপ্লবে। ইতিহাসের নির্মম যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সে হত্যাকাণ্ডের আমরা অবশ্যই সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। সেই সর্বোচ্চ শাস্তিটা আমরা চাই আইনি পরিকাঠামোয়।’

 

তিনি বলেন, ‘বিগত আমলে গুম খুনের পলিটিকাল কালচার সৃষ্টি হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এমন একটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যেখানে খুনের রাজনীতি বন্ধ হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে গুম খুন চাঁদাবাজি, টাকা পাচার করা হয়েছে। আর এর বিরুদ্ধেই ছিল বৈষম্যবিরোধী জুলাই আন্দোলন।’

 

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘স্বৈরাচারদের যদি কোনো সমিতি করা হয়, শেখ হাসিনা সেই সমিতির সভাপতি হতে পারেন। আর মিথ্যার পিএইচডি করার জন্য হিটলারও হয়তো শেখ হাসিনার কাছে আসতেন।’

 

তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভ নেই, আমরা অপরাধের বিরুদ্ধে এসেছি। আমরা ন্যায়বিচার চাই। দেশের মানুষের স্বপ্নের বিচার চাই। আমরা ন্যায়বিচার চাইব, ন্যায় বিচারের মধ্য দিয়েই আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি চাইব।’

 

এরপর সূচনা বক্তব্য দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ট্রাইব্যুনালে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

 

এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও আসামি। এই মামলায় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি হলেও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। এখন তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।

 

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একইসঙ্গে এ মামলায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ৩ আগস্ট এবং সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৪ আগস্ট দিন ঠিক করা হয়। মামলায় সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা ও জাতীয় দৈনিকের এক সম্পাদকসহ ৮১ জন।

 

স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রায় দেড় হাজার মানুষকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশদান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট ৫ অভিযোগ আনা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া-সংক্রান্ত শেখ হাসিনার অডিও রেকর্ড এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন।

 

এরপর প্রসিকিউশন বাদী হয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আন্দোলন কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না : রিজভী

» হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলেন নুরুল হক নুর

» দোহায় তৌহিদ হোসেন-ইসহাক দার বৈঠক

» বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে প্রস্তুত ঢাকা

» যমুনা অভিমুখে প্রাথমিক শিক্ষকরা, পুলিশের জলকামান-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

» জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহযোগিতা করা হবে: আসিফ মাহমুদ

» নবীর আদর্শ মনে প্রাণে ধারণ করে জীবন গঠন হবে ….. জেলা প্রশাসক নরসিংদী 

» ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশের উত্তরা ক্যাম্পাসে ইয়াং লার্নার ইংলিশ লার্নিং সেন্টার-এর নতুন শাখা চালু করল ব্রিটিশ কাউন্সিল

» ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’-এর অধীনে ব্র্যাক ব্যাংকের দেশব্যাপী আর্থিক সাক্ষরতা প্রোগ্রাম আয়োজন

» নওগাঁয় ডিবি পুলিশের অভিযানে মাদক কারবারি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাসহ আটক ৩

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞের সর্বোচ্চ শাস্তি চাইলেন অ্যাটর্নি জেনারেল

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক :  জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ইতিহাসের যে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে তার সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

 

আজ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে সূচনা বক্তব্যে এ আবেদন জানান তিনি।

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা আসাদুজ্জান বলেন, ‘আমাদের সামনে যে ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে জুলাই বিপ্লবে। ইতিহাসের নির্মম যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সে হত্যাকাণ্ডের আমরা অবশ্যই সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। সেই সর্বোচ্চ শাস্তিটা আমরা চাই আইনি পরিকাঠামোয়।’

 

তিনি বলেন, ‘বিগত আমলে গুম খুনের পলিটিকাল কালচার সৃষ্টি হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এমন একটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যেখানে খুনের রাজনীতি বন্ধ হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে গুম খুন চাঁদাবাজি, টাকা পাচার করা হয়েছে। আর এর বিরুদ্ধেই ছিল বৈষম্যবিরোধী জুলাই আন্দোলন।’

 

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘স্বৈরাচারদের যদি কোনো সমিতি করা হয়, শেখ হাসিনা সেই সমিতির সভাপতি হতে পারেন। আর মিথ্যার পিএইচডি করার জন্য হিটলারও হয়তো শেখ হাসিনার কাছে আসতেন।’

 

তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভ নেই, আমরা অপরাধের বিরুদ্ধে এসেছি। আমরা ন্যায়বিচার চাই। দেশের মানুষের স্বপ্নের বিচার চাই। আমরা ন্যায়বিচার চাইব, ন্যায় বিচারের মধ্য দিয়েই আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি চাইব।’

 

এরপর সূচনা বক্তব্য দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ট্রাইব্যুনালে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

 

এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও আসামি। এই মামলায় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি হলেও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। এখন তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।

 

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একইসঙ্গে এ মামলায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ৩ আগস্ট এবং সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৪ আগস্ট দিন ঠিক করা হয়। মামলায় সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা ও জাতীয় দৈনিকের এক সম্পাদকসহ ৮১ জন।

 

স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রায় দেড় হাজার মানুষকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশদান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট ৫ অভিযোগ আনা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া-সংক্রান্ত শেখ হাসিনার অডিও রেকর্ড এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন।

 

এরপর প্রসিকিউশন বাদী হয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com